বিসিবি সভাপতি যেভাবে নির্বাচিত হন

বিসিবি সভাপতি যেভাবে নির্বাচিত হন

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নির্বাচন পদ্ধতিটি বেশ জটিল। সভাপতি পদে সরাসরি ভোট হয় না। বরং, সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে হলে প্রথমে একজনকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়। পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আসার পর পরিচালকবৃন্দের মধ্যে একজন প্রস্তাব ও আরেকজনের সমর্থনের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়।

বিসিবির পরিচালক সংখ্যা ২৫। এই পরিচালকরা ক্লাব, জেলা-বিভাগ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং সাবেক খেলোয়াড়, সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা থেকে নির্বাচিত হন।

বিসিবির গঠনতন্ত্র থেকে জানা গেছে, প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাব থেকে সবাই একজন করে কাউন্সিলরশিপ পান। এদের মধ্যে থেকে ১২ জন পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন। দশের অধিক প্রার্থী হলে সেখানে এই ক্লাবগুলোর ভোটাররাই ভোট প্রদান করে নির্বাচিত করবেন। ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠক/পৃষ্ঠপোষক/সাবেক ক্রীড়াবিদ মূলত এই ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পরিচালক পদে।

এছাড়া দেশের সাতটি বিভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা পরিচালক নির্বাচন ব্যবস্থা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে দু’টি এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেটে একটি করে পরিচালক পদ রয়েছে। স্ব স্ব বিভাগের পরিচালক প্রার্থীদের ওই বিভাগের ভোটাররাই শুধু ভোট প্রদান করবেন। প্রতিটি বিভাগে ভোট প্রদান করেন তাদের অর্ন্তগত জেলা ক্রীড়া সংস্থার মনোনীত কাউন্সিলররা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর সাধারণত সেই জেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা যে কেউ হতে পারেন, আবার এর বাইরেও হতে পারেন।

এছাড়াও আরেকটি ক্যাটাগরিতে মাত্র একটি পরিচালক পদ রয়েছে। সাবেক খেলোয়াড়, বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থা থেকে একজন পরিচালক হতে পারেন। গত নির্বাচনে এই ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পরবর্তীতে সুজন ওই পদে নির্বাচিত হন। তিন মেয়াদেই একই পদে নির্বাচন করছেন সুজন।

এই তিন ক্যাটাগরির বাইরে রয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটার পরিচালক। বর্তমান বোর্ডে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কোটায় পরিচালক। এই কোটায় কোনো নির্বাচন হয় না। এনএসসি যাদের মনোনয়ন দেবেন, সরাসরি নির্বাচিত হবেন তারা। এই কোটার আরও স্বাধীনতা রয়েছে— জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে ক্লাব, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে দু’জনকে এনএসসি কোটায় পরিচালক মনোনীত করতে পারে।

২০১৩ সালে নাজমুল হাসান পাপন এনএসসি কোটায় পরিচালক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পরিচালকরা তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। গত দুই নির্বাচনে তিনি ঢাকা আবাহনীর কাউন্সিলর হিসেবে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে একই প্রক্রিয়ায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন পাপন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর ও পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় রয়েছে। অনেক ক্রীড়া সংগঠক অন্য ফেডারেশনের কাউন্সিলর থাকেন। সেক্ষেত্রে বিসিবি ছাড়া অন্য আরেকটি ফেডারেশনের কাউন্সিলর থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ। যদি কারও তিনটি ফেডারেশনের কাউন্সিলরশিপ থাকে, তাহলে বিসিবির কাউন্সিলর হতে পারবেন না। আবার বিসিবি’র কোনো পরিচালক অন্য কোনো ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতেও থাকতে পারবেন না। তবে অন্য ফেডারেশনের সাধারণ পরিষদের সদস্য (কাউন্সিলর) হতে পারবেন।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকে অ্যাডহক ভিত্তিতেই চলতো বাংলাদেশ ক্রীড়া ফেডারেশন। তবে ১৯৯৬ সাল থেকে এই নিয়মে পরিবর্তন এসেছে। সে সময়ে ক্ষমতায় এসে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্রীড়াঙ্গনের ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় ক্ষমতাসীনরা। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচন হয়ে আসছে।

শুরুর দিকে অন্য সব ফেডারেশনের মতো ফুটবল, ক্রিকেটে ক্ষমতাসীন দল থেকে সভাপতি মনোনীত করা হতো। বাকি সব পদে নির্বাচন হতো। এরপর বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা-ফিফার বাধ্যবাধকতার কারণে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও (বাফুফে) নির্বাচন হয়ে আসছে।

অন্যদিকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ক্রিকেটেও সরকার মনোনীত সভাপতি ছিল। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। পরের বছর নির্বাচিত সভাপতি হন তিনি। ২০১৩ সালের পর ২০১৭ এবং ২০২১ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে এই দায়িত্বে আছেন তিনি।

একনজরে বর্তমান পরিচালক-

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ : জালাল ইউনুস, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।

সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থা ক্যাটাগরি : খালেদ মাহমুদ সুজন।

ক্লাব ক্যাটাগরি : নাজমুল হাসান পাপন, মাহবুব আনাম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, মঞ্জুর কাদের, মনজুরুল আলম, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, গাজী গোলাম মর্তুজা, নজীব আহমেদ, ওবেদ রশিদ নিজাম, সালাহউদ্দিন চৌধুরি, ইফতেখার রহমান মিঠু ও ফাহিম সিনহা।

জেলা-বিভাগ ক্যাটাগরি : নাইমুর রহমান দুর্জয়, তানভীর আহমেদ টিটো, কাজী ইনাম, শেখ সোহেল, আকরাম খান, আ জ ম নাসির, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, সাইফুল আলম স্বপন, আলমগীর খান আলো ও শফিউল আলম চৌধুরি নাদেল।

আপনি আরও পড়তে পারেন